পরিচালক পায়েল কাপাডিয়া বললেন ” মেয়েদের গল্প বিশ্বের স্বীকৃতি পাচ্ছে, সেটাই বড় কথা”
প্র: ছবির গল্পটা কিভাবে মাথায় এসেছিল?
উ: পুনে এফ টি আই আই এর ফাইনাল ইয়ারে পড়ার সময়ই ভাবনাটা মাথায় আসে। সেই সময়ে পরিবারের একজন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। প্রত্যেকদিন সেখানে গিয়ে দেখতাম, কিভাবে নার্সদের জীবন আবর্তিত হয়। বিভিন্ন শহর থেকে মুম্বাইয়ে কাজ করতে আসা অসংখ্য মেয়েদের গল্প বলতে চেয়েছিলাম।
প্র: এই ছবির তিন অভিনেত্রীকে কিভাবে বাছাই করলেন
উ: যখন গল্পটা লিখতে শুরু করেছিলাম, তখন থেকেই কানিকে( কুশ্রুতি) ভেবে রেখেছিলাম। আর নাগরাজ মন মঞ্জুলের একটা ছবিতে ছায়াজির (কদম) অভিনয় দেখে ওর ফ্যান হয়ে গিয়েছিলাম। কাজ করতে গিয়ে জানলাম, ওর চরিত্র পার্বতীর মতই, উনিও রত্ন গিরির মানুষ। সেখান থেকে মুম্বাইয়ের কাজ করতে আসা মানুষদের জীবন, উপকূল এলাকার লোকদের মাছ, কাঁকড়ার প্রতি ভালোবাসা. . . সবকিছু নিয়েই ওর স্পষ্ট ধারণা ছিল। আর দিব্যা প্রভাকে খুঁজে পেয়েছিলাম একটা নেটফ্লিট ছবি দেখে। মাস্ক পড়ে সারা ছবিতে অভিনয় করে গেল, শুধু চোখ দিয়ে।
প্র: “অল উই ইমাজিন এজ লাইট” বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পেয়েছে। বক্স অফিস থেকে কি প্রত্যাশা ?
উ: আমার ছবি যে সিনেমা হলে রিলিজ করছে, এটাই আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার। পশ্চিমবঙ্গ আর কেরলের মতো রাজ্যে এখনো এই ধরনের ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবির দর্শক আছে বলে মনে হয়। কিন্তু আমার মত পরিচালকদের কাছে সব সময়ই বিষয়টা চ্যালেঞ্জিং। প্রযোজক পাওয়াই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আমি শব্দ এক্স হ্যান্ডেল এ এসেছি, ছবি নিয়ে পোস্ট করছি। তবে এখনো ইনস্টাগ্রামে অ্যাকাউন্ট নেই আমার। ছবি দেখতে যাচ্ছে, ইট’স টু নাইস ফর মি(হাসি) !
প্র: কান-এ গ্রাঁ প্রি পাওয়ার অনুভূতি কিরকম ছিল?
উ: যেদিন পুরস্কার পাই, সেদিন সকালেই কর্তৃপক্ষ ফোন করে জানিয়ে দেয়, ‘ আপনি পুরস্কার পাচ্ছেন’। যদিও কি, সেটা বলেনা। এর আগে এমনও হয়েছে, পুরস্কার না নিয়েই বাড়ি চলে গিয়েছেন প্রাপকরা! তাই এবারের খবরটা পেয়ে আর শখ লাগেনি। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সকলের কাছে এটা বিরাট সম্মান। যাদের ছবি দেখে বড় হয়েছি, তাঁরা আমার নাম ঘোষণা করেছিলেন যখন, প্রায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতন অবস্থা হয়েছিল!
প্র: এ ছবিতে নগ্ন দৃশ্য রয়েছে। কোন কাট ছাড়াই সেন্সর বোর্ডে ছবি পাস হয়ে গেল, অবাক হননি?
উ: অবাক হওয়ার মতোই ব্যাপার! বিষয়টা নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলাম। সেন্সর বোর্ড দৃশ্য কেটে দিলে কিভাবে ওদের এ্যাপ্রোচ করব, সেসব নিয়ে লম্বা বক্তৃতাও তৈরি করে রেখেছিলাম। কিন্তু সে সবকিছুই করতে হয়নি।
প্র: এদেশের প্রান্তিক মানুষদের দুঃখ, দারিদ্র্যের গল্প বিশ্বের সামনে তুলে ধরা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করছেন এই ছবি। খারাপ লাগেনি?
উ: সব শিল্পীকেই এই বিষয়টির মুখোমুখি হতে হয়। আপনি একভাবে দেখাতে চান, কিছু মানুষ সেটার জন্য মানে দাঁড় করায়। তখন আপনার কিছু করার থাকে না। সব তো আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। একটা ছবিতে পরিচালক হিসাবে নিজেকে প্রশ্ন, চিন্তা ভাবনায় ফুটে উঠবে। একজন ভারতীয় নারী হিসেবে আমি অন্য নারীদের যেভাবে দেখি, সেটাই ফুটে উঠেছে। তার ভিন্ন মানে বার করলে কিছু করার নেই।
প্র: মূল ধরার ছবি যেখানে উগ্র পুরুষের উদযাপন করেছে, আপনার ছবির পুরো চরিত্রেরা নিচু তারে বাঁধা…
উ: আমি উগ্র নারীবাদ এর উদযাপন করছি( হাসি)! আসলে পুরুষাশিত সমাজের ভিত্তিম কখনো কখনো পুরুষরাও। সমাজে নারী-পুরুষে ভাগ করে দেওয়াটা কারো উপকার করে না আদতে। আমার ছবিতে যেসব পুরুষ সমস্যা সৃষ্টি করেছে, তারা খুবইতেই নেই! ছবিটা তৈরীর আগে বহু মহিলার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। দুবাইয়ে থাকা স্বামী, গ্রামে থাকা শ্বশুর মশাইয়ের বারণ আছে বলে মহিলারা জিন্স বা সালোয়ার করতে পারছেন না, এ আমার চোখে দেখা! জামা কাপড় থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণ. . . সব দাড়ি টাই মেয়েদের উপরে আসে। তাই আমার ছবিতেও তাদের কথাই চলে আসে বারবার।
প্র: ‘লাপাতা লেডিস’ এবার অস্কার এন্ট্রি তে যাওয়া নিয়ে আপনার কি মত?
উ: খুব ভালো খবর। আসলে কোন ছবি অস্কারের দৌড়ে পাঠানো হবে, তা নিয়ে প্রচুর জল্পনা চলে। তবে মেয়েদের ছবি বিশ্বের স্বীকৃতি পাচ্ছে, সেটাই বড় কথা। সে আমার ছবি হোক কিংবা। কিরণ রাও, রিমা দাস, সন্ধ্যা সুরির মত পরিচালকের।
প্লট
প্রভা এবং অনু মালয়ালি নার্সরা মুম্বাইতে একসাথে থাকেন । প্রভা স্ট্রেলেসড এবং খাড়া, এবং তার স্বামীর জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা করেন যিনি তাদের বিয়ের পরেই জার্মানিতে চলে আসেন। অনু আরও বহির্মুখী, এবং শিয়াজ নামে একজন মুসলিম ব্যক্তির সাথে তার গোপন সম্পর্ক রয়েছে। একজন ডাক্তার, মনোজ, প্রভাকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি তার বৈবাহিক অবস্থা দাবি করে তার অগ্রগতি প্রত্যাখ্যান করেন। একদিন, প্রভা এবং অনু একজন অজানা প্রেরকের কাছ থেকে একটি আধুনিক রাইস কুকার পায়।
প্রভা তাদের হাসপাতালের বাবুর্চিকে সাহায্য করার চেষ্টা করে, পার্বতী, একটি পুঁজিবাদী নির্মাতার বিরুদ্ধে লড়াই করে যে পার্বতীর চাল ভেঙে একটি উঁচু ভবন তৈরি করতে চায়। জমির মালিকানা দাবি করতে না পেরে পার্বতী তার চাকরি ছেড়ে রত্নাগিরিতে তার গ্রামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় । প্রভা এবং অনু তার সাথে ভ্রমণ করে, তাকে স্থানান্তরিত করতে সহায়তা করার জন্য।
প্রভা ও পার্বতীর অজান্তেই শিয়াজ অনুকে অনুসরণ করেছে। তারা গোপনে মিলিত হয় এবং সেক্স করে, যা প্রভা আবিষ্কার করে। এদিকে, সিপিআর দিয়ে পুনরুজ্জীবিত করে মধ্যবয়সী এক ব্যক্তিকে ডুবে যাওয়া থেকে উদ্ধার করেন প্রভা। যখন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, প্রভা তাকে পরিষ্কার করে এবং তার যত্ন নেয়। সে তার সাথে কথোপকথন শুরু করে, তাকে তার স্বামীতে রূপান্তরিত করে। তিনি তাকে ত্যাগ করার জন্য ক্ষমা চান এবং তাকে চুম্বন করার আগে তার ক্ষমা চান।
গভীর রাতে একটি সমুদ্র সৈকতের খুপরিতে, প্রভা একজন বিস্মিত অনুকে শিয়াজকে তাদের সাথে বসতে আমন্ত্রণ জানায়। খুপরির আলো তাদের উপরে জ্বলে উঠলে তারা সবাই একসাথে বসে সুখে।
News22online
নিউজ টুয়েন্টি টু অনলাইন