হৃদরোগের পর অনেকেই অবসাদে আক্রান্ত হন। এর থেকে বেরোতে চায় পরিবারের সহচর্য ও চিকিৎসা
সত্তরোর্ধ অমলের কোনদিন মর্নিং ওয়ার্ক বাদ পড়তো না। সকলের সঙ্গে মিলে গল্প আড্ডায় সময় কাটতো তার। সেই সদা হাস্য মানুষটি বাইপাস সার্জারির পরে শারীরিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেও, ক্রমশ চুপচাপ হয়ে গেলেন। কারো সঙ্গে কথা নেই, হাসি নেই মুখে। সারাদিন ধরে একা শুয়ে বসে থাকতে চান। জানা গেল তিনি ভুগছেন কার্ডিয়াক ডিপ্রেশনে, যা নারী পুরুষ উভয়েরই হতে পারে। এই সমস্যা যেমন সকলের হয় না, তেমন বিরলও নয়।
এই বিষয়ে কনসালটেন্ট নিউরোসাইকায়াটিস্ট ড: ঈশানী রায় চট্টোপাধ্যায় বললেন,” মায়োকার্ডিয়াল ইনফেকশন, কার্ডিয়াক সার্জারি, এনজাইনা, স্টেন্ট বসানো, বাইপাস সার্জারি ইত্যাদি কার্ডিয়াক ডিপ্রেশনের জন্ম দিতে পারে। সব ক্ষেত্রেই স্ট্রেস থাকে।
কার্ডিয়াক ডিপ্রেশন যে শুধু অপারেশনের পরে হবে, তা নয়। এমনও পেসেন্ট পেয়েছি যিনি নিজের সার্জারির ব্যাপারে অতিরিক্ত টেনশন করতে করতে সার্জারির আগেই অবসাদে চলে গিয়েছিলেন। সার্জারির পরেও অনেকে চিন্তা করেন, অপারেশন হয়তো ঠিকমতো হলো না, তা থেকেও অবসাদ দেখা দিতে পারে। অনেকে ভাবেন আদেও আগের মত সুস্থ হতে পারব কিনা। কারো মনে আবার অবসর এগিয়ে আসার চিন্তা. . . . একাধিক বয়স্কালীন ইস্যু থেকে অবসর তৈরি হতে পারে।
” যাদের দুশ্চিন্তা করা প্রবণতা বেশি, তাদের ক্ষেত্রে এই ডিপ্রেশন হওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। তবে বাকিদের মধ্যেও কার্ডিয়ান সমস্যা সেরে ওঠার তিন চার মাস পরে অবসর তৈরি হতে পারে ,জানালেন চিকিৎসক।
গোড়ায় বোঝা জরুরি
সচেতন হতে হবে গড়াতেই। অবসাদ এলে আচরণের মধ্যে বদল আসবে। হয়তো দেখা যাবে, যিনি সকলের সঙ্গে বসে খেতেন, গল্প করতেন তিনি এখন একা থাকতে চাইছেন। পছন্দের খাবার খেলেও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বেঁচে থাকার অনীহা তার কথায় কাজে প্রকাশ পাবে।
এই অবসাদ থেকে কি মুক্তি সম্ভব?
ওষুধ সাইকো থেরাপি ইত্যাদির মাধ্যমে কয়েক মাসের মধ্যে সেরে ওঠা সম্ভব। সম্ভব তবে’ ছেড়ে ওঠার চেয়ে বলা ভালো ‘নিয়ন্ত্রণ’ করা সম্ভব। যাদের ডায়াবেটিস, থাইরয়েড , উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তারা নিয়মিত চেকআপ করে, ওষুধ খেয়ে, শরীর চর্চার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখেন, এক্ষেত্রেও তাই। যত তাড়াতাড়ি রোগ ধরা যাবে, তত তাড়াতাড়ি অবসাদ ঝেড়ে ফেলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব বললেন ড: ঈশানী রায় চট্টোপাধ্যায়।
পরিবারের সদস্যদের পাশে থাকা জরুরী
অবসাদ কাটিয়ে আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে অবসাদগ্রস্থ মানুষটিকে যেমন নিজেকে চেষ্টা করতে হবে, তেমন এগিয়ে আসতে হবে তার পরিবারকেও । বাড়িতে একটা সদর্থক আবহাও তৈরি করতে হবে। সকলে মিলে একসঙ্গে সময় কাটানো, বেড়াতে যাওয়া, আত্মীয় বন্ধুদের বাড়ি যাওয়া। রোগীকে তার ভালো লাগার বিষয়গুলি নিয়ে সময় কাটাতে উৎসাহ দেওয়ার কাজ করতে হবে ঘনিষ্ঠদেরই। ” এ ধরনের সমস্যায় রোগের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলে থাকি আমরা। তাদের নজর রাখতে হবে রোগী নিয়মিত চেকআপ করাচ্ছেন কিনা, ঠিকমতো ওষুধ খাচ্ছেন কিনা। এর পাশাপাশি বাড়ির সকলকে রোগীর সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটাতে হবে। নাতি নাতনিদের সঙ্গ, তাদের সঙ্গে ইনডোর গেম খেলা, গল্প করা, বাগানের ঘোড়া বেশ ভালো ফল দেয়। অবসাদ কাটানোর জন্য আমরা কিছু কাজ করে দিই, যা রোজ করতে হয়। অনেকেরই পুরোটা করতে পারেন না, চান ও না।
সে সময় যদি কেউ বলেন, ‘ মাত্র একটা কাজ করলে, বাকিটা করতে পারছো কিনা’। তাতে মানুষটির মনে নেগেটিভ ইম্প্যাক্ট পড়বে। এই কথাটাই যদি এভাবে বলা হয়, ‘ তোমার তো দারুণ উন্নতি হচ্ছে। তুমি যখন একটা করে ফেলেছো, বাকিগুলো ধীরে ধীরে করতে পারবে। ‘ তাতে মানুষটির মনে আশা তৈরি হয়, তার চেষ্টা করার ইচ্ছে জাগে। তিনি ভাবেন বাড়ির লোক তার উপরে ভরসা করছে।
এসবের পাশাপাশি কার্ডিওলজিস্ট এর কাছে ফলোআপ করানোর সময় জানাতে হবে, সাইকিয়াটিস্টের নির্দেশিত ওষুধ ও থেরাপি সম্পর্কে। ঠিক একইভাবে সাইকিয়াটিস্টকে জানাতে হবে কার্ডিওলজিস্ট এর চিকিৎসা পদ্ধতি। এই দুজনে সঙ্ঘবদ্ধ চিকিৎসাতেই একজন সুস্থ হয়ে উঠবেন। কাডিও সমস্যা ও তার থেকে জন্ম নেওয়া অবসরের ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চলবে সুস্থ থাকা যাবে সহজেই।
News22online
নিউজ২২ অনলাইন