নিজস্ব প্রতিনিধি : পরিচালক রাহুলের সাথে সমস্যার জের মিটতে না মিটতেই পরিচালক সংগঠন থেকে ২৩ কোটি টাকার মামলা করা হয় ফেডারেশনের মাথা স্বরূপ বিশ্বাস মহাশয় -র বিরুদ্ধে এই মামলার এখনো নিষ্পত্তি না হলেও ফেডারেশন কিন্তু একের পর এক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ছে।
গত ১২ ই নভেম্বর দক্ষিণ কলকাতায় মেনকা সিনেমার সামনে নবাগত পরিচালক প্রণবেশ বসু ৫-৬ জন নতুন আর্টিস্টদের নিয়ে একটি youtube এর শর্ট ফিল্ম এর শুটিং করছিলেন। মেনকা সিনেমা হলের সামনে শুটিং করার জন্য মেনকা সিনেমা হল থেকেও পারমিশন নিয়েছিলেন।
কিন্তু দুপুর বারোটা নাগাদ হঠাৎ করে ৬ – ৭ জন গলায় ফেডারেশনের ব্যাচ ঝুলিয়ে লাল রঙের টাটা সুমো করে চলে আসে এবং ক্যামেরা তুলে ফেডারেশনের অফিসে চলে যাবার জন্য জোড়াজড়ি করতে থাকে।
পরিচালকের বক্তব্য তারা বার বারই স্বরূপ বিশ্বাসের লোক বলে দাবি করতে থাকে এবং বলে হাসান দা বলে একজনের নাম। এবং তারা জোর করতে থাকে যে পরিচালক ও ক্যামেরা টি তারা গাড়িতে তুলে ফেডারেশনের অফিসে চলে যাবে এবং সেখানেই হবে বিচার।
নবাগত পরিচালক প্রণবেশ বাবু আমাদের প্রতিনিধিকে জানান তার একটি ইউটিউব চ্যানেল আছে, যার সাবস্ক্রাইবার মাত্র ৩৫০, তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করার সাথে সাথে ইউটিউবে বিভিন্ন কাজ করার স্বপ্ন দেখেন তাই মাইনের টাকা থেকে সবাইকে গাড়ি ভাড়া আর খাওয়া খরচ দিয়ে রাজি করেন শুটিং করার জন্য!
কিন্তু তাকে শুটিংয়ের দিন ফেডারেশনের আইকার্ড ধারী টেকনিশিয়ানরা হঠাৎ করে এসে বলে যে রেড করা হয়েছে, এবং তারা ক্যামেরা নিয়ে চলে যাবার জন্য চাপ প্রদান করে |
প্রণবেশ বাবু প্রায় এক ঘন্টা ধরে বোঝানোর চেষ্টা করেও অসফল হন এবং যারা আসেন তারা কিছুই শুনতে রাজি হয় না, অবশেষে টালিগঞ্জ থানায় ফোন করতে বাধ্য হন এবং পুলিশ এসে সবাইকে থানায় নিয়ে যান এবং থানায় বড়বাবু র হস্তক্ষেপে ফেডারেশনের প্রত্যেক সদস্য নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন এবং ক্ষমা চান।
প্রণবেশ বাবুর উকিলের বক্তব্য উনার মক্কেল একজন হাই প্রেশার রোগী, ওনাকে সবাই মিলে এতটাই মানসিক চাপ প্রদান করেছেন যাতে যে কোন মুহূর্তে তার মক্কেলের শারীরিক অবনতি ঘটতে পারতো। এর জন্য কে দায়ী থাকতো? উনি জানিয়েছেন বেশ কিছু ধারায় উনি হিউম্যান রাইটস কমিশন ও পুলিশের কাছে এফ আই আর করবেন প্রত্যেকের বিরুদ্ধে। আমাদের প্রতিনিধি ইম্পার চেয়ারম্যান ঋতব্রত ভট্টাচার্যের কাছে জানতে চেয়েছিলেন ইউটিউব বা ইউটিউব এর জন্য ফেডারেশনের কি ২০-২৫ জন টেকনিশিয়ান, গাড়ি ইত্যাদি সব ডিপার্টমেন্ট নিয়ে কাজ করার কোন বাধ্যতামূলক নিয়ম আছে কিনা,উনি আমাদের জানিয়েছেন “এই রকম কোনো নিয়মাবলী ওনাদের নেই। কোন ইউটিউবার, ব্লগার নিজেদের ইচ্ছায় কাজ করতেই পারে। আর কাজটা যেহেতু ইউটিউবে সেহেতু ইউটিউবের গাইড লাইন মেনে চললেই হল।”
প্রনবেশ বাবুর উকিল আমাদের জানান ফেডারেশন যেই জোর জুলুমটা করে চাইছে সেটা আইনত ভুল, আইনের কোথাও লেখা নেই যে কোন ট্রেড ইউনিয়ন সংস্থা তাদের ইচ্ছামতন দাবি-দাওয়া কোন স্বতন্ত্র ব্যক্তির উপর জোর করে চাপিয়ে দিতে পারেন । কোন মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোন কাজ করতে গেলে কোন গিল্ড বা ফেডারেশনে গিয়ে তাকে কাজ করার অনুমতি নিতে হবে এমন কোন নিয়ম হতে পারে না, এতে তার স্বাধীন ব্যক্তিসত্তার লঙ্ঘন হচ্ছে। ( আর কারোর স্বাধীনতা হস্তক্ষেপ করাটাও আইনত অপরাধ ) একজন নতুন পরিচালক বা ব্লগার বা ইউটিউবার ফেডারেশনের কাছে গিয়ে অনুমতি নেবেন কেনো?
কিন্তু স্বরূপ বিশ্বাস বাবুর বক্তব্য ( ফেডারেশনে করা ২৯ জুলাই ২০২৪ এ করা প্রেস কনফারেন্সে ) কোন পরিচালক যাই কাজ করুক ফেডারেশন কে জানাতে হবে এবং ফেডারেশন টিম গঠন করে দেবেন, কিন্তু এখানে প্রশ্ন হচ্ছে একজন স্বতন্ত্র ফিল্ম মেকার একটি জিরো বাজেট কাজ করতে যদি চান এবং তার যদি স্বল্প টেকনিশিয়ান নেওয়ার ক্ষমতাও না থাকে তাহলে তিনি কি তার কোন বন্ধু-বান্ধবের ক্যামেরা নিয়ে বা মোবাইল এ কাজ করতে পারবেন না?
দিও স্বরূপ বিশ্বাস মহাশয় বারবার কাজ বন্ধ না করার পক্ষে বক্তব্য রেখেছেন, তবুও ফেডারেশনের কিছু টেকনিশিয়ান বিভিন্ন ছোট ইন্ডিপেন্ডেন্ট শুটিংয়ে গিয়ে ঝামেলা করে শুটিং বারং বার বন্ধ করে দিচ্ছেন। বহু অভিযোগের মধ্যে আমরা মুক্তি প্রাইম OTT চ্যানেল এর চেয়ারম্যান পার্থবাবুর সঙ্গেও কথা বলি এবং তিনি ও তার একইভাবে তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা আমাদের জানান। কলকাতার আরো দু-তিনটি ছোট ও টি টি প্লাটফর্মের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি এবং তারা আমাদের জানান যে কলকাতার টলি পাড়ার এই চোখ রাঙানোর জন্যেই জন্য তারা তাদের কাজগুলো বাইরের রাজ্যে নিয়ে গিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছেন। একজন টেকনিশিয়ান ( নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক) আমাদেরকে জানান এতে সর্বোপরি কলকাতার কাজের বাজার খারাপ হচ্ছে। বহু কাজ বাইরে চলে যাচ্ছে ও ভিন রাজ্যের টেকনিশিয়ানরা কাজ পাচ্ছে। কিন্তু এখানের টেকনিশিয়ানদের হাতে কাজের সংখ্যা দিন দিন অনেক কমে যাচ্ছে। একজন পরিচালকের বক্তব্য আজকের দিনের ছোট DSLR ক্যামেরা দিয়ে অনেক ভালো ভালো কাজ করা সম্ভব। কিন্তু ফেডারেশন এখনো ৩০-৪০ বছর আগের নিয়মাবলীতে আটকে রয়ে গেছে। আজ কিন্তু শুটিং করতে গেলে ডিজিটাল ক্যামেরা ও পোস্ট প্রোডাকশনের প্রযুক্তি গত বিরাট উন্নতি ঘটবার জন্য সত্যিই সব সময় এত লোকের প্রয়োজন হয় না।
আর এক পরিচালকের মতে স্বরূপ বিশ্বাস মহাশয় কে তারই সংগঠনের কিছু মানুষজন কালিমা লিপ্ত করছেন। সময় এসে গেছে উনি যদি এই মুহূর্তে কোন কড়া পদক্ষেপ না নেন তাহলে ভবিষ্যতে কলকাতায় আর হয়তো কোন কোনদিনও অস্কার ফিরে আসবেনা । কারণ আজকের প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যদি মন খুলে কাজই না করতে পারে অস্কার জয়ী সত্যজিৎ রায় বাবুর এই কলকাতাতে, তাহলে আমরা আর জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসনের দাবিদার হতে পারব না কোনদিনও।
ভিডিও সৌজন্যে এবিপি আনন্দ
News22online
নিউজ ২২ অনলাইন 7980852530